নিরব কুমার দাস,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:
কোমরের নিচ থেকে অবশ হওয়ায় দুই পা থেকেও নাই। যখন থেকে বুঝতে শিখেছেন তখন থেকে হামাগুড়ি দিয়ে পথ চলছেন। আর এ ভাবে চলতে গিয়ে হাটুর চামড়াগুলো উঠে যেত। পরে ঘা হয়ে যন্ত্রনা হতো।
এমন কষ্টে চলতো হতে কালাম হোসেনকে (৩৪)। তিনি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের চকভবানি পুর্বপাড়া গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে।
পারিবারিক অবস্থায় শোচনীয়। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় কালাম হোসেন। জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার এই অবস্থা থেকেই মা ১০ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। স্কুলে যেতে না পারায় পড়াশুনা শেখা হয়ে উঠেনি।
বাড়িতে থেকে যেটুকু শিক্ষা পেয়েছেন তা হলো নাম টা লিখতে পারেন। দুইভাই বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। তার মা মারা যাওয়ার পর বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করে সংসার শুরু করেছেন।
কালাম হোসেন যখন থেকে বুঝতে শিখেছেন তখন থেকে হাঁস-মুরগি পালন এবং স্থানীয়দের মাছ শিকারের জাল তৈরী করে আয় করা শুরু করেন। এভাবেই চলতে থাকে তিনি সহ তার ছোট ভাই মানষিক প্রতিবন্ধীর জীবন। তিনি ভিক্ষা না করে কয়েক বছর আগে স্থানীয় এক ব্যক্তি জমিতে গ্রামের রাস্তার পাশে একটি মাত্র বেড়ার ঘর তুলে সেখানে বেকারির দোকান দিয়েছেন।
যেখানে প্রায় এক হাজার টাকার মতো মালামাল রয়েছে। আর ওই দোকান ঘরে দুই ভাই বসবাস করেন। যা লাভ হয় তা দিয়ে তাদের দিন চলে। একবেলা রান্না করে তিনবেলা খান। দুরে যাতায়াতের জন্য ভাঙাচুরা ভ্যানের তিন চাকার একটি বাহন আছে। দোকানে আর একটু মালামাল হলে বিক্রি বেশি হতো। কিন্তু টাকার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।
অসহায় কালাম হোসেন বলেন, আমার এই ছোট্ট দোকানে মালামাল খুবই কম। অনেক ক্রেতা এসে জিনিস না পেয়ে ফিরে যায়। টাকার অভাবে মালামাল কিনতে পারছিনা। প্রতিবন্ধী একটা কার্ড আছে। গত কয়েক মাস থেকে ভাতাও পাচ্ছিনা। টাকা পেলে একটু মালামাল কিনতে পারতাম।
যেখানে দোকান করে আছি জমির মালিক কয়েকবার জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকিও দিয়েছেন। জায়গাটি ছেড়ে দিলে কোথাও মাথা গোজার জায়গা পাবো না। পাশের গ্রামে সিধাতলে গুচ্ছগ্রাম হচ্ছে। সেখানে একটি ঘর বরাদ্দ নেয়ার জন্য চেষ্টা করছি। ঘর পেলে দোকান দিবো পাশাপাশি হাঁস-মুরগি পালন করবো। শুনছি আমাকে ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে না।
স্থানীয় আবু হাসান ও রেজাউল ইসলাম বলেন, সে ঠিক মতো চলতে পারেনা। জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। মানুষের জায়গায় ঘর তুলে দোকান করেছে। কয়েকবার জায়গাটা তাকে ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু তার তো কোথায় যাওয়ার জায়গা নাই। অনেক প্রতিবন্ধী আছে যারা ভিক্ষা করে। কিন্তু সে ভিক্ষা না করে জীবন চালাতে ছোট্ট একটা বেকারির দোকান দিয়েছে।
এক বেলা রান্না করে তিনবেলা খাই। আবার কোন বেলা খাবারও জোটে না। বেশির ভাগই ভত্তা ভাত খেতে দেখা যায়। সমাজে অনেক বৃত্তবান আছেন তারা চাইলেই একটু সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তার দোকানটি বড় পরিসরে সাজিয়ে দিতে পারবে।
স্থানীয় ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার জহুরুল ইসলাম বাবু বলেন, কালাম হোসেন নিত্যান্ত অসহায় যুবক। ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে কোন রকম দুই ভাইয়ের জীবন চলে। এছাড়া সে সরকার থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে পাশে গ্রামে যে গুচ্ছগ্রাম (আবাসন) করা হচ্ছে সেখানে ঘরের বরাদ্দের বিষয়টি ইউএনও এবং ইউপি চেয়ারম্যান দেখবেন। আমার সেখানে কোন কর্তৃত্ব নাই।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।